পরীক্ষা করে দেখা গেছে একই পরিমাণের বিভিন্ন গ্যাস একই আয়তনের বিভিন্ন পাত্রে একই তাপমাত্রায় রেখে যদি চাপ পরিমাপ করা হয় তাহলে প্রত্যেকের চাপ প্রায় সমান পাওয়া যায়। তাপমাত্রা আরো বাড়িয়ে যদি আবার চাপ পরিমাপ করা হয় তাহলে গ্যাসগুলোর চাপের মান আরো কাছাকাছি পাওয়া যায়। তাপমাত্রা যত বাড়ান যাবে চাপের পার্থক্য ততই কমতে থাকবে। তাপমাত্রা আরো বাড়িয়ে চাপ পরিমাপ করতে থাকলে একসময় দেখা যাবে প্রত্যেকটি গ্যাসই pV=nRT সমীকরণ মেনে চলছে। এখানে p = গ্যাসের চাপ, V = গ্যাসের আয়তন, n = গ্যাসের মোল সংখ্যা, R = সর্বজনীন গ্যাস ধ্রুবক, প্রত্যেক গ্যাসের জন্যে যার মান 8.31 J mol-1K-1এবং T = কেলভিন এককে গ্যাসের তাপমাত্রা। এ সমীকরণকে বলা হয় আদর্শ গ্যাস সমীকরণ। উচ্চ তাপমাত্রা ও নিম্নচাপে সকল গ্যাস এ সমীকরণ মেনে চলে। যে সকল গ্যাস সকল তাপমাত্রা ও চাপে এই সমীকরণ মেনে চলে তারাই আদর্শ গ্যাস। প্রকৃতিতে অবশ্য এমন কোনো গ্যাসের অস্তিত্ব নেই যা প্রকৃতপক্ষে আদর্শ। উচ্চতাপমাত্রা ও নিম্নচাপে সকল গ্যাসই আদর্শ গ্যাসের ন্যায় আচরণ করে। আদর্শ গ্যাসের আচরণ থেকেই আমরা বাস্তব গ্যাস সম্পর্কে ধারণা পেতে পারি। তাই আমরা সকল গ্যাস সমীকরণ আদর্শ গ্যাসের উপর ভিত্তি করে প্রতিপাদন করি।
১. বয়েলের সূত্র এ সূত্র তাপমাত্রা স্থির থাকলে আয়তন ও চাপের মধ্যে সম্পর্ক নির্দেশ করে।
২. চার্লসের সূত্র : এ সূত্র চাপ স্থির থাকলে আয়তন ও তাপমাত্রার মধ্যে সম্পর্ক নির্দেশ করে।
৩. চাপীয় সূত্র : এ সূত্র আয়তন স্থির থাকলে চাপ ও তাপমাত্রার মধ্যে সম্পর্ক নির্দেশ করে।
রবার্ট বয়েল নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় আয়তন ও চাপের মধ্যে সম্পর্ক নির্ণয় করে এ সূত্র উপস্থাপিত করেন।
এ সূত্রানুসারে কোনো গ্যাসের ভর ও তাপমাত্রা স্থির থাকলে আয়তন চাপের উপর নির্ভর করে। চাপ দ্বিগুণ করলে আয়তন অর্ধেক হয়, চাপ তিনগুণ করলে আয়তন এক-তৃতীয়াংশ হয়। কোনো স্থির তাপমাত্রায় নির্দিষ্ট ভরের গ্যাসের আয়তন V এবং চাপ p হলে,
যখন তাপমাত্রা ও ভর স্থির থাকে।
V = ধ্রুবক ×
বা, pV =ধ্রুবক K
এখানে K একটি সমানুপাতিক ধ্রুবক। এ সমানুপাতিক ধ্রুবক K এর মান গ্যাসের ভর, তাপমাত্রা ও এককের উপর নির্ভর করে। সুতরাং যদি স্থির তাপমাত্রায় কোনো নির্দিষ্ট ভরের গ্যাসের P1, P2,…..…Pn… চাপে আয়তন যথাক্রমে V1, V2.....….Vn হয় তবে,
বয়েলের সূত্রানুসারে আমরা পাই,
=ধ্রুবক K .. (10.1)
সমীকরণ ( 10.1 ) থেকে দেখা যায় যে, চাপ ও আয়তন পরস্পরের ব্যস্তানুপাতিক। তাই চাপ ও আয়তনের বিভিন্ন মানের জন্য স্থির তাপমাত্রায় নির্দিষ্ট ভরের গ্যাসের আয়তন (V) ও চাপ p এর লেখচিত্র আয়তাকার অধিবৃত্ত (Rectangular hyperbola) হয় (চিত্র ১০.১ ক)।
আবার X অক্ষের দিকে P এবং Y অক্ষের নিয়ে লেখচিত্র আঁকলে (১০.১খ) চিত্রের ন্যায় হবে। এক্ষেত্রে স্থির তাপমাত্রায় p এর সাথে বৃদ্ধি পায় বা p হ্রাস পেলে হ্রাস পায়।
একটি বদ্ধ পাত্রের মধ্যে যদি গ্যাসের কতগুলো অণু ছেড়ে দেয়া হয়, নিশ্চয় অণুগুলো সেই পাত্রের ভিতর অদিক ওদিক ছোটাছুটি করবে । অণুগুলো পাত্রের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ কিংবা উচ্চতা বরাবর ছুটতে পারবে । অর্থাৎ অনুগুলো তিন মাত্রা বরাবর চলাচল করতে পারবে । আদর্শ গ্যাসের অণুগুলো যতগুলো মাত্রা বরাবর চলাচল করতে পারে, তাকে তার স্বাধীনতার মাত্রা বলে ।
এক পারমানবিক গ্যাস যেমনঃ হিলিয়াম, নিয়ন, আর্গন ইত্যাদি গ্যাসের অণুগুলোতে মাত্র একটি অণু থাকায় আমরা এদেরকে একটি বলের মত করে চিন্তা করতে পারি । এই বলগুলো মুক্তভাবে তিন মাত্রা বরাবর বিচরণ করতে পারে । তাই আমরা বলে থাকি, এক পারমানবিক গ্যাসের স্বাধীনতার মাত্রা তিন ।
এবার দ্বি-পারমানবিক গ্যাস যেমনঃ নাইট্রোজেন, অক্সিজেন ইত্যাদির একটি অণুতে দুইটি করে পরমাণু বন্ধনের মাধ্যমে যুক্ত থাকে । যাদেরকে আমরা চিন্তা করতে পারি, দুইটি বল একটি দন্ডাকার বস্তুর মাধ্যমে যুক্ত আছে । এখানে যেহেতু দুইটি পরমাণু যুক্ত আছে, তাই আমাদের মনে হতে পারে- এদের স্বাধীনতার মাত্রা তিনটি করে মোট ছয়টি হবে । কিন্তু তা নয় । বন্ধনের মাধ্যমে যুক্ত থাকার কারনে এদের উভয়ের মাঝে একটি মাত্রা কমন হয়ে যাবে । সে কারণে দুইটি পরমাণুর এককভাবে দুইটি দুইটি করে মোট চারটি এবং কমন একটি মিলে এদের মোট পাঁচটি মাত্রা পাওয়া যাবে । তাই দ্বি-পারমানবিক গ্যাসের স্বাধীনতার মাত্রা হবে পাঁচটি ।
একইভাবে ত্রি-পারমানবিক গ্যাসের স্বাধীনতার মাত্রা হবে নয়টির পরিবর্তে সাতটি । যেকোন অণু কিংবা পরমাণুর একটি স্বাধীনতার মাত্রা বরাবর শক্তি, 1/2.KT করে ।
তাহলে,
এভাবেই গ্যাসের অণুগুলোর মোট শক্তি এদের স্বাধীনতার মাত্রা বরাবর সমানভাবে বন্টিত হয় । যাকে বলা হয়, শক্তির সমবিভাজন নীতি ।
স্থির চাপে নির্দিষ্ট ভরের গ্যাসের তাপমাত্রা ও আয়তনের মধ্যকার সম্পর্ক অনুসন্ধান করে জ্যাকুইস চার্লস ১৭৮৭ সালে একটি সূত্র প্রকাশ করেন যা চার্লসের সূত্র১ নামে পরিচিত।
এ নির্দিষ্ট ভগ্নাংশ হচ্ছে স্থির চাপে গ্যাসের আয়তন প্রসারণ সহগ। এটি নির্দেশ করে স্থির চাপে 0°C তাপমাত্রার নির্দিষ্ট ভরের গ্যাসের তাপমাত্রা 0°C থেকে প্রতি ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি করলে ঐ গ্যাসের প্রতি একক আয়তনে আয়তনের কতটুকু প্রসারণ হবে। একে দিয়ে সূচিত করা হয়। সকল গ্যাসের জন্য আয়তন প্রসারণ সহগের মান ° C-1 বা 0.00366°C-1 অর্থাৎ চাপ স্থির রেখে 0°C তাপমাত্রার নির্দিষ্ট ভরের 1m3 গ্যাসের তাপমাত্রা 1°C বাড়ালে এর আয়তন 0.00366 m3 বাড়ে।
চার্লসের সূত্র অনুসারে স্থির চাপে 0°C তাপমাত্রায় কোনো নির্দিষ্ট ভরের গ্যাসের আয়তন V° হলে 0°C থেকে প্রতি 1 ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার পরিবর্তনের জন্য এর আয়তন x V° হারে পরিবর্তিত হবে। °C তাপমাত্রার পরিবর্তনের জন্য আয়তনের পরিবর্তন হবে X V°। সুতরাং °C তাপমাত্রায় যদি ঐ গ্যাসের আয়তন V হয় তবে চার্লসের সূত্রানুসারে,
এখানে T হচ্ছে °C তাপমাত্রার আনুষঙ্গিক পরম বা কেলভিন তাপমাত্রা।
যেহেতু একটি ধ্রুব রাশি
সুতরাং V T যখন চাপ ও ভর স্থির থাকে।
অতএব চার্লসের সূত্রকে লেখা যায়,
অর্থাৎ গ্যাসের ভর ও চাপ স্থির রেখে কেলভিন তাপমাত্রা দ্বিগুণ করা হলে আয়তন দ্বিগুণ হবে, কেলভিন তাপমাত্রা তিনগুণ করা হলে আয়তন তিনগুণ হবে।
এ সূত্রের সাহায্যে স্থির আয়তনে গ্যাসের চাপ ও তাপমাত্রার মধ্যে সম্পর্ক পাওয়া যায় ।
এ নির্দিষ্ট ভগ্নাংশ হচ্ছে স্থির আয়তনে গ্যাসের চাপ প্রসারণ সহগ। এটি নির্দেশ করে স্থির আয়তনে 0°C তাপমাত্রার নির্দিষ্ট ভরের গ্যাসের তাপমাত্রা 0°C থেকে প্রতি ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি করলে ঐ গ্যাসের প্রতি একক চাপে চাপের কতটুকু বৃদ্ধি ঘটে। একে দিয়ে সূচিত করা হয়।
চাপের সূত্রানুসারে স্থির আয়তনে কোনো নির্দিষ্ট ভরের গ্যাসের চাপ 0°C তাপমাত্রায় po হলে 0°C থেকে প্রতি ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা পরিবর্তনের জন্য এর চাপ X P° হারে পরিবর্তিত হবে। °C তাপমাত্রা পরিবর্তনের জন্য চাপের
পরিবর্তন হবে P° । সুতরাং °C তাপমাত্রায় ঐ গ্যাসের চাপ যদি p হয় তবে চাপীয় সূত্রানুসারে,
এখানে T' হচ্ছে θ°C তাপমাত্রার আনুষঙ্গিক পরম বা কেলভিন তাপমাত্রা। যেহেতু একটি ধ্রুব রাশি সুতরাং
pT যখন আয়তন ও ভর স্থির থাকে।
অতএব চাপের সূত্রকে লেখা যায়,
অর্থাৎ গ্যাসের ভর ও আয়তন স্থির রেখে কেলভিন তাপমাত্রা দ্বিগুণ করা হলে চাপ দ্বিগুণ হবে, কেলভিন তাপমাত্রা তিনগুণ করা হলে চাপ তিন গুণ হবে।
ধরা যাক, m ভরের কোনো গ্যাসের আয়তন, চাপ ও পরম তাপমাত্রা যথাক্রমে V, p এবং T।
pV = KT ….. (10.5)
এখানে K একটি ধ্রুব সংখ্যা, এর মান গ্যাসের ভর, m উপর নির্ভর করে।
যদি T1, T2,…… Tn কেলভিন তাপমাত্রায় এবং P1, P2…. .. Pn চাপে কোনো নির্দিষ্ট ভরের গ্যাসের আয়তন যথাক্রমে V1, V2 .... Vn, হয়, তাহলে উপরিউক্ত সমীকরণ অনুসারে,
ধ্রুবক (10.7)
যদি এক মোল (mole) বা এক গ্রাম অণু গ্যাস বিবেচনা করা হয় তাহলে সকল গ্যাসের জন্য এই ধ্রুব সংখ্যার মান একই হয়। তখন এই ধ্রুবককে R দিয়ে নির্দেশ করা হয়, অন্যক্ষেত্রে একে K দিয়ে প্রকাশ করা হয়।
সুতরাং এক মোল গ্যাসের জন্য
বা, pV = RT
এখানে R হচ্ছে মোলার গ্যাস ধ্রুবক এবং V হচ্ছে এক মোল গ্যাসের আয়তন। অ্যাভোগাড্রোর অনুকম্প অনুসারে অভিন্ন চাপ ও তাপমাত্রায় যেকোনো গ্যাসের এক মোল একই আয়তন দখল করে এবং প্রমাণ তাপমাত্রা ও চাপে এই আয়তন হচ্ছে 22.4 litre বা, 22.4 x 10-3m3। সুতরাং R-এর মান সকল গ্যাসের জন্য একই। এজন্য R-কে সর্বজনীন বা বিশ্বজনীন গ্যাস ধ্রুবক বলে। R-এর মান এস আই বা আন্তর্জাতিক পদ্ধতিতে 8.31 J K-1 mol-1
যদি এক মোল বা এক গ্রাম অণু গ্যাস না নিয়ে m পরিমাণ গ্যাস নেওয়া হয় যার আয়তন V এবং ঐ গ্যাসের আণবিক ভর যদি M হয়, তবে এক মোল বা এক গ্রাম অণু গ্যাসের আয়তন হবে V। সুতরাং ( 10.7) সমীকরণে V এর পরিবর্তে V বসিয়ে আমরা পাই,
বা, pV = RT
কিন্তু হচ্ছে গ্যাসের মোলের সংখ্যা যা পূর্ণ সংখ্যা বা ভগ্নাংশ হতে পারে। একে n দিয়ে প্রকাশ করা হলে উপরিউক্ত
সমীকরণ দাঁড়ায়,
pV =nRT
এ সমীকরণ হচ্ছে বয়েল ও চার্লসের সূত্রের সংযুক্ত রূপ। এ সমীকরণকে সাধারণত গ্যাস সমীকরণ বা আদর্শ গ্যাসের অবস্থার সমীকরণ বলা হয়। কেননা, যেকোনো ভরের গ্যাসের চাপ, আয়তন এবং তাপমাত্রা জেনে এর ভৌত অবস্থা পরিপূর্ণভাবে জানা যায় ।
এজন্য (10.9) সমীকরণকে আদর্শ গ্যাস সমীকরণও বলে। বাস্তবে কোনো গ্যাসই আদর্শ গ্যাসের ন্যায় আচরণ করে না। কেবলমাত্র নিম্নচাপ ও উচ্চ তাপমাত্রায় গ্যাস এ সমীকরণ মেনে চলে।
১। সকল গ্যাস অণুর সমন্বয়ে গঠিত। একটি গ্যাসের সকল অণু সদৃশ এবং একটি গ্যাসের অণু অন্য গ্যাসের অণু থেকে
২। গ্যাসের অণুগুলোর আকার অণুগুলোর মধ্যবর্তী দূরত্বের তুলনায় নগণ্য।
৩। গ্যাসের অণুগুলো কঠিন স্থিতিস্থাপক সদৃশ গোলক বিশেষ এবং অণুগুলোর নিজেদের মধ্যে কোনো আকর্ষণ বা বিকর্ষণ বল নেই। এদের শক্তি সম্পূর্ণটাই গতিশক্তি ।
৪। গ্যাসের অণুগুলো অক্রম বা এলোমেলো (random) গতিতে গতিশীল এবং এগুলো নিউটনের গতিসূত্রসমূহ মেনে চলে। অণুগুলো সকল দিকে গতিশীল এবং এদের বেগের মান বিভিন্ন।
৫। অণুগুলো নিরবচ্ছিন্নভাবে একে অপরের সাথে এবং আধারের দেয়ালের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হচ্ছে। দুটি সংঘর্ষের মধ্যবর্তী সময়ে একটি অণু সরলরেখায় চলে। দুটি সংঘর্ষের মধ্যবর্তী সময়ে একটি অণু যে দূরত্ব অতিক্রম করে তাকে মুক্ত পথ বলে।
৬। একটি সংঘর্ষে যে সময় ব্যয় হয় তা দুটি সংঘর্ষের মধ্যবর্তী সময়ের তুলনায় নগণ্য ।
৭। সংঘর্ষগুলো সম্পূর্ণ স্থিতিস্থাপক।
পদার্থ মাত্রই অণু দিয়ে গঠিত। তাপ শক্তির একটি রূপ এবং তা পদার্থের অণুগুলোর গতির সাথে সম্পর্কিত। পদার্থের অণুগুলো সব সময়ই গতিশীল। বায়বীয় পদার্থের অণুগুলো মোটামুটি স্বাধীনভাবে কোনো বদ্ধ স্থানের মধ্যে নড়াচড়া করতে পারে। বায়বীয় পদার্থের আচরণের নিয়মগুলো পেতে যে তত্ত্ব সৃষ্টি হয়েছে সেই তত্ত্বই গ্যাসের গতিতত্ত্ব নামে পরিচিত। গতিতত্ত্বের মূল কথা হল তাপীয় উত্তেজনার ফলে গ্যাসের অণুগুলো অক্রম বা এলোমেলো (random) গতিতে গতিশীল। গ্যাসের অণুগুলোর গড় গতিশক্তি গ্যাসের পরম তাপমাত্রার সমানুপাতিক । যখন গ্যাসের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায় তখন অণুগুলোর গড় গতিশক্তি বৃদ্ধি পায়। যখন গ্যাস থেকে তাপ অপসারণ করা হয় তখন অণুগুলোর গড় গতিশক্তি হ্রাস পায়। সুতরাং পরমশূন্য তাপমাত্রায় গতিশক্তি শূন্য হবে। এর অর্থ পরমশূন্য তাপমাত্রায় অণুগুলো স্থির অবস্থায় থাকবে এবং কোনো গতি শক্তি থাকবে না। কিন্তু পরমশূন্য তাপমাত্রায় পৌঁছার পূর্বেই সকল গ্যাস তরল বা কঠিন অবস্থায় রূপান্তরিত হয়ে যায়। গ্যাসের নানাবিধ আচরণের সাথে যেমন গ্যাসের ব্যাপন (diffusion), অভিস্রবণ ( osmosis). স্বতঃবাষ্পীভবন (evaporation), বাষ্পচাপ, গ্যাসের প্রসারণ, ব্রাউনীয় গতি ইত্যাদির মোটামুটি ব্যাখ্যা গ্যাসের গতিতত্ত্ব থেকে পাওয়া যায়। ব্রাউনীয় গতি থেকে গতিতত্ত্বের প্রত্যক্ষ প্রমাণও পাওয়া যায় ।
যে গ্যাসের অণুগুলো যেকোনো তাপমাত্রা এবং চাপে গতিতত্ত্বের মৌলিক স্বীকার্যগুলো মেনে চলে এবং স্বীকার্য থেকে লব্ধ সূত্রানুযায়ী আচরণ করে সে গ্যাসকে আদর্শ গ্যাস বলে। প্রকৃতপক্ষে কোনো গ্যাসই আদর্শ গ্যাসের মতো আচরণ করে না এটি কেবল কল্পনা মাত্র। তবুও আমরা এ আদর্শ গ্যাসের যাবতীয় সূত্র থেকে প্রকৃত গ্যাসের আচরণ সম্পর্কে ধারণা পেতে পারি।
ছয় তলবিশিষ্ট আদর্শ স্থিতিস্থাপক পদার্থের একটি ঘনাকৃতি ফাঁপা পাত্র লই। মনে করি এটি ABCDEFOH [চিত্র ১০.৫ ]। পাত্রটির প্রত্যেকটি বাহুর দৈর্ঘ্য l । অতএব এর আয়তন V = P
ধরি পাত্রটি M ভরের একটি আদর্শ গ্যাস দ্বারা পূর্ণ এবং গ্যাসের ঘনত্ব p। মনে করি গ্যাসের অণুর সংখ্যা । এবং প্রত্যেকটি অণুর ভর । উক্ত অণুগুলোর মধ্য হতে একটি অণু বিবেচনা করি যার বেগ [চিত্র ১০৭)। এই বেগকে OX, OY এবং OZ অক্ষ বরাবর যথাক্রমে u1, V1 এবং উপাংশে বিভাজন করি। অতএব আমরা লিখতে পারি,
মনে করি অণুটি OX বরাবর u1 বেগে গিয়ে ABCD তলকে আঘাত করল। অণুর ভর m হলে OX অক্ষ বরাবর তার ভরবেগ = mu1 | দেয়ালটির সাথে অণুর স্থিতিস্থাপক সংঘর্ষ ঘটে। ফলে অণুটি একই বেগে পশ্চাৎদিকে প্রতিক্ষিপ্ত ( rebound) বা ফেরত আসে। অতএব সংঘর্ষের পর এর ভরবেগ = mu1
অণুটির বেগের u1 উপাংশের দরুন ভরবেগের পরিবর্তন = mu1 - (- mu1) = mu1+mu1 = 2mu1 আবার ABCD তলে একবার ধাক্কা খাবার পর EFOH তলে আর একবার ধাক্কা খাবে। OX অক্ষ বরা অণুটির বেগ u1, হওয়ায় ABCD তল হতে EFOH তলে আসতে এর সময় লাগে অর্থাৎ সময় পর অণুটির বেগের u1 উপাংশের দরুন ভরবেগের পরিবর্তন = 2mu1
:- অণুটির বেগের u1 উপাংশের জন্য ভরবেগের পরিবর্তনের হার = ভরবেগের পরিবর্তন/সময়
অনুরূপভাবে গ্যাস অণুটির বেগের v1 উপাংশের জন্য ভরবেগের পরিবর্তনের হার =
পরীক্ষা নিরীক্ষার সময় আমরা জড় জগতের যে সীমিত অংশ বিবেচনা করি তাকে বলা হয় সিস্টেম বা ব্যবস্থা। সিস্টেমের বাইরে যা কিছু তাকে বলা হয় পরিবেশ। পিস্টন লাগানো কোনো সিলিন্ডারের মধ্যে কিছু গ্যাস আবদ্ধ থাকলে তাকে আমরা
সিস্টেম বলি। সিলিন্ডারের চারপাশে যা কিছু আছে তা হচ্ছে এর পরিবেশ। সংজ্ঞা : কোনো গতিশীল সিস্টেমের অবস্থান সম্পূর্ণভাবে বোঝাতে মোট যে সংখ্যক স্বাধীন রাশির প্রয়োজন হয় তাকে বা গতিশীল সিস্টেমের মোট গতিশক্তির রাশিমালায় যে কয়টি স্বাধীন বর্গ রাশি পাওয়া যায় সেই সংখ্যাকে
স্বাধীনতার মাত্রার সংখ্যা বলে।
উদাহরণের সাহায্যে বিষয়টিকে আরো একটু পরিষ্কার করা যায়। ধরা যাক, একটা পোকা কোনো রশি বেয়ে চলছে। এক্ষেত্রে পোকাটির স্বাধীনতার মাত্রা হবে এক। কারণ পোকাটির অবস্থানকে আমরা একটি মাত্র অক্ষের সাহায্যে প্রকাশ করতে পারি। আবার পোকাটির X - অক্ষ বরাবর বেগ vs হলে এর গতিশক্তি হবে, mvx2 এখানে m হচ্ছে পোকাটির ভর। এখানে গতিশক্তির রাশিমালায় একটি মাত্র বর্গরাশি অর্থাৎ রয়েছে তাই পোকাটির স্বাধীনতার মাত্রা এক।
পোকাটি যদি কোনো দেয়াল বেয়ে চলতে থাকে তাহলে তার অবস্থান প্রকাশ করতে দুটি অক্ষের সাহায্য নিতে হবে। vx এবং v, যদি X ও Y অক্ষ বরাবর পোকাটির বেগের উপাংশ হয় তাহলে পোকাটির গতিশক্তি হবে mvx2+ mvy2 গতিশক্তির রাশিমালায় দুটি স্বাধীন বর্গরাশি থাকায় এর স্বাধীনতার মাত্রা হবে দুই। যে পোকা উড়তে পারে না তার ক্ষেত্রে স্বাধীনতার মাত্রা দুইয়ের অধিক হওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু পোকাটি যদি উড়তে থাকে তাহলে তার অবস্থান বোঝাতে তিনটি অক্ষের প্রয়োজন হবে সে ক্ষেত্রে এর স্বাধীনতার মাত্রা হবে তিন।
গতি তত্ত্বের স্বীকার্য অনুসারে, আদর্শ গ্যাসের প্রতিটি অণুর ভর অত্যন্ত নগণ্য এবং এরা এলোমেলো গতিতে যেকোনো
দিকে গতিশীল। এভাবে গতিশীল কোনো একটি অণুর যেকোনো মুহূর্তের অবস্থান নির্দেশ করতে কমপক্ষে তিনটি স্থানাঙ্ক (x, y, z) -এর প্রয়োজন হয়। তাই আদর্শ গ্যাসের প্রতিটি অণুর স্বাধীনতার মাত্রা 3।
স্বাধীনতার মাত্রাকে এভাবেও বলা যায়-
কোনো গতিশীল সিস্টেমের অবস্থান সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করতে। গুলো স্থানাঙ্কের প্রয়োজন হয় তার সংখ্যাই হচ্ছে স্বাধীনতার মাত্রা। কোনো সিস্টেমের স্বাধীনতার মাত্রার সংখ্যা = সিস্টেমের উপাদানগুলোর অবস্থান সম্পূর্ণরূপে প্রকাশ করতে প্রয়োজনীয়
মোট স্থানাঙ্কের সংখ্যা এবং উপাদানগুলোর পরস্পরের ভিতর স্বতন্ত্রভাবে যে সম্পর্ক রয়েছে তার অন্তর ফলের সমান।
কোনো গ্যাস অণুতে x সংখ্যক পরমাণু থাকলে স্বাধীনতার মাত্রা সর্বাধিক হবে 3x । এখন এক পরমাণু গ্যাসের বেলায় x = 1, কাজেই এক্ষেত্রে স্বাধীনতার মাত্রা হবে 3 দ্বি-পারমাণবিক গ্যাসের বেলায় x = 2, কাজেই স্বাধীনতার মাত্রা হওয়া উচিত 3 × 2 = 6।
কিন্তু পরমাণু দুটি পরস্পরের মধ্যে নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখায় অর্থাৎ পরমাণু দুটির মধ্যে একটি সম্পর্ক থাকায় স্বাধীনতার মাত্রা হবে ( 3 x 2 1 ) = 5। বহু পারমাণবিক যেমন ত্রি পারমাণবিক গ্যাসের ক্ষেত্রে পরমাণু তিনটি, - অণুর ভিতরে দুভাবে সজ্জিত থাকতে পারে। যেমন মাঝখানে একটি এবং দুপাশে দুটি বা ত্রিভুজের তিন কোণে তিনটি। প্রথম ক্ষেত্রে স্বাধীনতার মাত্রা হবে ( 3 x 3 − 2 ) = 7 এবং দ্বিতীয় ক্ষেত্রে হবে ( 3 x 3 − 3 ) = 6
কোনো তরল পদার্থকে একটি আবদ্ধ পাত্রে রেখে বাষ্পায়নের সুযোগ দিলে দেখা যাবে যে, ঐ পাত্র ক্রমশ বাষ্প দ্বারা পূর্ণ হচ্ছে। বাষ্পের অণুগুলো পাত্রের মধ্যে ইতস্তত বিক্ষিপ্তভাবে চারদিকে ছুটাছুটি করে বেড়ায়। ছুটাছুটি করার সময় অণুগুলো পরস্পরের সাথে এবং পাত্রের গায়ে ধাক্কা খায়। ফলে পাত্রের গায়ে চাপের সৃষ্টি হয়। এ চাপকে বাষ্পচাপ (Vapour pressure) বলে। বাষ্পের অণুগুলো বিক্ষিপ্তভাবে ঘুরাফেরা করার সময় কিছু কিছু জাণু তরলের মধ্যে ফিরে আসে। ক্রমে এমন একটা অবস্থার সৃষ্টি হয় যখন বাষ্পে রূপান্তরিত হওয়া অণুর সংখ্যা এবং তরলে ফিরে আসার অণুর সংখ্যা সমান হয়। অর্থাৎ বলা যেতে পারে ঐ স্থানে যতটুকু বাষ্প থাকা সম্ভব তা পূর্ণ হয়েছে এবং এর চেয়ে বেশি বাষ্প আর ঐ স্থানে থাকতে পারে না। তাই বাষ্পায়িত সমস্ত অণুগুলো পুনরায় তরলে ফিরে আসে। এ অবস্থায় বলা হয় যে, ঐ স্থান বাষ্প দ্বারা সম্পৃক্ত হয়েছে। এ অবস্থায় বাষ্প যে চাপ দেয় তাকে সম্পৃক্ত বাষ্পচাপ বলে। কোনো স্থানের বাষ্প ধারণ ক্ষমতার চেয়ে কম বাষ্প থাকলে এ বাষ্পকে অসম্পৃক্ত বাষ্প বলে এবং ঐ বাষ্প যে চাপ দেয় তাকে অসম্পৃক্ত বাষ্পচাপ বলে।
কোনো নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় কোনো আবদ্ধ স্থানের বাষ্প সর্বাধিক যে চাপ দিতে পারে তাকে সম্পৃক্ত বাষ্পচাপ (Saturated Vapour Pressure বা S. V. P) বা সর্বোচ্চ বাষ্পচাপ (Maximum vapour pressure) বা শুধু বাষ্পচাপ (Vapour pressure) বলে। আবার কোনো নির্দিষ্ট তাপমাত্রার কোনো আবদ্ধ স্থানের বাষ্পচাপ যদি সর্বোচ্চ বাষ্পচাপের চেয়ে কম হয় শো আরম্ভ স্থানের বান্দা তাহলে সেই চাপকে অসম্পৃক্ত বাষ্পচাপ বলে।
পরীক্ষার সাহায্যে অসম্পৃক্ত ও সম্পৃক্ত জলীয় বাষ্পের চাপ ও আয়তন পরিমাপ করে X অক্ষের দিকে বাষ্পের আয়তন এবং Y-অক্ষের দিকে অসম্পৃক্ত বাষ্প চাপ নিয়ে লেখচিত্র আঁকলে (১০.১১) চিত্রের ন্যায় লেখচিত্র পাওয়া যাবে।
লেখচিত্রের AB অংশ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, অসম্পৃক্ত বাষ্পচাপ বাষ্পের আয়তনের ব্যস্তানুপাতিক অর্থাৎ অসম্পৃক্ত বাষ্প বয়েলের সূত্র মেনে চলে। B বিন্দুতে অসম্পৃক্ত বাষ্প সম্পৃক্ত হতে শুরু করে এবং ঐ তাপমাত্রায় বাষ্পের সম্পৃক্ত বাষ্পচাপ পাওয়া যায়। এ অবস্থায় চাপ বৃদ্ধির সাথে সাথে বাষ্প ঘনীভূত হতে শুরু করে এবং বাষ্পের খানিকটা অংশ তরলে রূপান্তরিত হয় যদিও বাষ্পচাপ সম্পৃক্ত বাষ্প চাপে স্থির থাকে। BC অংশে তরল ও সম্পৃক্ত বাষ্প সহাবস্থান করে। C বিন্দুতে সমুদয় বাষ্প তরলের রূপান্তরিত হয়। লেখচিত্রের BC অংশ থেকে দেখা যায় যে সম্পৃক্ত বাষ্প বয়েলের সূত্র মেনে চলে না। এক্ষেত্রে কিছু বাষ্প ঘনীভূত হয়ে যাওয়ায় বাষ্পের ভর হ্রাস পায় বলে সম্পৃক্ত বাষ্প আর বয়েলের সূত্র মেনে চলে না। কারণ বয়েলের সূত্র নির্দিষ্ট ভরের বাষ্প বা গ্যাসের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য।
পৃথিবীর সাগর, মহাসাগর, খাল-বিল, নদী-নালা, পুকুর প্রভৃতি থেকে প্রতিনিয়ত পানি বাষ্পীভূত হচ্ছে এবং এ জলীয় বাষ্প বায়ুমণ্ডলে মিশে যাচ্ছে। এ জলীয় বাষ্প শুষ্ক বায়ুর চেয়ে হালকা অর্থাৎ জলীয় বাষ্পের ঘনত্ব শুষ্ক বায়ুর ঘনত্বের চেয়ে কম। বায়ুতে জলীয় বাষ্প থাকলে সেই বায়ুকে বলা হয় আর্দ্র বায়ু ।
আমরা জানি বায়ুমণ্ডল চাপ দেয়। এ চাপের মধ্যে আছে শুষ্ক বায়ুর চাপ এবং জলীয় বাষ্পের চাপ। আমরা এখন তাদের
মধ্যে সম্পর্ক স্থাপন করবো। কোনো এক সময়ে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা, T
ঐ সময় বায়ুমণ্ডলের চাপ, P
ঐ সময় বায়ুমণ্ডলে উপস্থিত জলীয় বাষ্পের চাপ, f
ঐ সময় শুধু বায়ুর চাপ, Pa
ঐ সময় অর্থাৎ T' তাপমাত্রা ও Pa চাপে বায়ুর ঘনত্ব Pa
STP তে তাপমাত্রা, To = 273 K
STP তে বায়ুর চাপ, P = 1.013 x 105Nm-2
STP তে বায়ুর ঘনত্ব po = 1.293 kgm-3
সুতরাং ডাল্টনের আংশিক চাপের সূত্রানুসারে ঐ সময়ের শুধু বায়ুর চাপ,
Pa=P-f
এখন গ্যাসের সমীকরণ থেকে আমরা পাই,
বা,
এটি হচ্ছে জলীয় বাষ্পের চাপ ও বায়ুর চাপের মধ্যকার সম্পর্ক।
পৃথিবীর চারভাগের তিনভাগই জলাশয়। জলাশয়গুলো থেকে প্রতিনিয়ত পানি বাষ্পীভূত হয়ে বায়ুমণ্ডলে মিশে যাচ্ছে। ফলে বায়ুমণ্ডল ভিজা থাকে তথা আর্দ্র থাকে। বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সময়ে বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বিভিন্ন হয়। এটা নির্ভর করে স্থান ও আবহাওয়ার উপর। আবার একই স্থানে বিভিন্ন ঋতু ও সময়ে বায়ুমণ্ডলে অবস্থিত জলীয় বাষ্পের তারতম্য হয়। বর্ষাকালে বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্প বেশি থাকে এবং শীতকালে ।
আমরা এ অনুচ্ছেদে বায়ুমণ্ডলে জলীয় বাষ্পের উপস্থিতি তথা বায়ুমণ্ডলের আর্দ্রতা নিয়ে আলোচনা করব।
পরম আর্দ্রতা (Absolute humidity) : বায়ুর প্রতি একক আয়তনে উপস্থিত জলীয়বাষ্পের ভরকে ঐ স্থানের পরম আর্দ্রতা বলে। কোনো স্থানের পরম আর্দ্রতা 5 gm-3 বলতে বোঝায় ঐ স্থানের প্রতি ঘনমিটার বায়ুতে 5 g জলীয়বাষ্প আছে।
নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় নির্দিষ্ট আয়তনের বায়ুর জলীয়বাষ্প ধারণ করার ক্ষমতা সীমাবদ্ধ। তাপমাত্রা বাড়লে ঐ স্থানের জলীয়বাষ্প ধারণ করার ক্ষমতা বেড়ে যায়। যখন কোনো স্থানে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় সর্বোচ্চ পরিমাণ জলীয়বাষ্প থাকে, তখন ঐ স্থানকে জলীয়বাষ্প দ্বারা সম্পৃক্ত বলা হয়। বায়ু জলীয়বাষ্প দ্বারা সম্পৃক্ত হলে ঐ বায়ু আর জলীয়বাষ্প ধারণ করতে পারে না, তখন জলীয়বাষ্প ঘনীভূত হয়ে শিশিরে পরিণত হয়।
কোনো স্থানের তাপমাত্রা কমলে ঐ স্থানের জলীয়বাষ্প ধারণ ক্ষমতা কমে যায়। তাপমাত্রা ক্রমশ কমতে থাকলে নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় বায়ুমণ্ডল ঐ স্থানের জলীয়বাষ্প দ্বারাই সম্পৃক্ত হয়। ঐ তাপমাত্রায় বায়ুতে অবস্থিত জলীয়বাষ্প তখন শিশিরে পরিণত হয়। এ তাপমাত্রাই শিশিরাঙ্ক।
কোনো স্থানের তাপমাত্রা 30°C এবং শিশিরাঙ্ক 22°C বলতে বোঝা যায় ঐ স্থানে 30°C তাপমাত্রায় যে পরিমাণ জলীয়বাষ্প আছে তা দ্বারা ঐ স্থানের বায়ু অসম্পৃক্ত কিন্তু তাপমাত্রা কমিয়ে 22°C করা হলে ঐ জলীয়বাষ্প দ্বারাই ঐ স্থানের বায়ু সম্পৃক্ত হয়।
কোনো স্থানের জলীয়বাষ্পের চাপ ঐ স্থানের জলীয়বাষ্পের পরিমাণের উপর নির্ভর করে। জলীয়বাষ্পের পরিমাণ যত বেশি হবে তার চাপও তত বেশি হবে। কোনো নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় কোনো স্থানের অসম্পৃক্ত জলীয়বাষ্পের চাপ এবং শিশিরাঙ্কে ঐ স্থানের সম্পৃক্ত জলীয়বাষ্পের চাপ সমান হবে (কারণ একই পরিমাণ জলীয়বাষ্প দ্বারা শিশিরাক্ষে ঐ স্থানের বায়ু সম্পৃক্ত হয়)।
আবহাওয়া বিজ্ঞানে বায়ুমণ্ডলে উপস্থিত জলীয়বাষ্পের পরিমাণের চেয়ে বায়ুমণ্ডলের সম্পৃক্ততার মাত্রা অর্থাৎ বায়ুমণ্ডল কতখানি শুষ্ক বা ভেজা তা বেশি প্রয়োজন হয়। আপেক্ষিক আর্দ্রতা দিয়ে তাই বোঝানো হয়।
:- আপেক্ষিক আর্দ্রতা =বায়ুর তাপমাত্রায় নির্দিষ্ট আয়তনের বায়ুতে উপস্থিত জলীয়বাষ্পের ভর/বায়ুর তাপমাত্রায় ঐ বায়ুকে সম্পৃক্ত করতে প্রয়োজনীয় জলীয়বাষ্পের ভর
কিন্তু নির্দিষ্ট তাপমাত্রায় কোনো স্থানের জলীয়বাষ্পের চাপ ঐ স্থানের জলীয়বাষ্পের ভরের সমানুপাতিক।
:- আ: আর্দ্রতা= বায়ুর তাপমাত্রায় ঐ স্থানে উপস্থিত জলীয়বাষ্পের চাপ/বায়ুর তাপমাত্রায় ঐ স্থানকে সম্পৃক্ত করতে প্রয়োজনীয় জলীয়বাষ্পের চাপ
কিন্তু কোনো তাপমাত্রায় কোনো স্থানে জলীয়বাষ্পের চাপ ঐ স্থানে শিশিরাঙ্কে সম্পৃক্ত জলীয়বাষ্পের চাপের সমান ।
:-আপেক্ষিক আর্দ্রতা = শিশিরান্ধে সম্পৃক্ত জলীয়বাষ্পের চাপ/বায়ুর তাপমাত্রায় সম্পৃক্ত জলীয়বাষ্পের চাপ
আপেক্ষিক আর্দ্রতাকে R, শিশিরাঙ্কে সম্পৃক্ত জলীয়বাষ্পের চাপকে f, বায়ুর তাপমাত্রায় সম্পৃক্ত জলীয়বাষ্পের চাপকে F দিয়ে প্রকাশ করলে,
আপেক্ষিক আর্দ্রতাকে সাধারণত শতকরা হিসাবে প্রকাশ করা হয়।
তাৎপর্য : কোনো স্থানের আপেক্ষিক আর্দ্রতা 60% বলতে বোঝা যায়, বায়ুর তাপমাত্রায় ঐ স্থানকে সম্পৃক্ত করতে যে পরিমাণ জলীয়বাষ্পের প্রয়োজন তার শতকরা 60 ভাগ জলীয়বাষ্প ঐ স্থানের বায়ুতে আছে। বিভিন্ন তাপমাত্রায় সম্পৃক্ত জলীয়বাষ্পের চাপ কত রেনো (Regnaults) পরীক্ষার সাহায্যে সেগুলো নির্ণয় করে একটি তালিকা তৈরি করেছেন। নিম্নে সেই তালিকা প্রদান করা হলো :
কোনো স্থানের কোনো সময়ের আর্দ্রতা পরিমাপের জন্য যে যন্ত্র ব্যবহৃত হয় তাকে আর্দ্রতামাপক যন্ত্র বা হাইগ্রোমিটার বলে। আর্দ্রতামাপক যন্ত্রের কার্যপ্রণালির উপর ভিত্তি করে এদের চারটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায়; যথা :
১। সিক্ত ও শুষ্ক বালব আর্দ্রতামাপক যন্ত্র (Wet and dry bulb hygrometer),
২। শিশিরাঙ্ক আর্দ্রতামাপক যন্ত্র (Dewpoint hygrometer),
৩। রাসায়নিক আর্দ্রতামাপক যন্ত্র (Chemical hygrometer) এবং
৪। কেশ আর্দ্রতামাপক যন্ত্র (Hair hygrometer)।
যন্ত্রের বর্ণনা এ যন্ত্রে একই রকম দুটি পারদ থার্মোমিটার আছে যেগুলো পাশাপাশি উল্লম্বভাবে একটি কাঠের ফ্রেমের সাথে লাগানো থাকে। একটি থার্মোমিটার বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা প্রদান করে, অন্যটির বালবে মসলিনের বা লিনেনের সলতে জড়ানো থাকে এবং এ সলতে একটি পাত্রে রাখা পানির মধ্যে ডুবানো থাকে। পানি মসলিন বা লিনেন বেয়ে উপরে ওঠে এবং থার্মোমিটারের বাল্বকে সব সময় ভিজা রাখে (চিত্র : ১০.১২)।
মসলিন বা লিনেন থেকে পানি বাষ্পায়িত হয় ফলে সিক্ত বাল্ব থার্মোমিটার শুষ্ক বালব থার্মোমিটারের চেয়ে কম তাপমাত্রা নির্দেশ করে। এ দু তাপমাত্রার পার্থক্য বায়ুমণ্ডলের আপেক্ষিক আর্দ্রতার উপর নির্ভর করে। বায়ুমণ্ডলের আর্দ্রতা কম হলে বাষ্পায়ন দ্রুত হয়, ফলে দু তাপমাত্রার পার্থক্য বেশি হয়, অপরপক্ষে আর্দ্রতা বেশি হলে তাপমাত্রার পার্থক্য কম হয়। আর যদি বায়ুমণ্ডল জলীয়বাষ্প দ্বারা সম্পৃক্ত হয়, তবে কোনো বাষ্পায়ন হয় না ফলে উভয় থার্মোমিটারের পাঠ একই হয়।
পরীক্ষা : যে স্থানের আপেক্ষিক আর্দ্রতা নির্ণয় করতে হবে সেই স্থানে যন্ত্রটিকে রেখে এর থার্মোমিটার দুটির পাঠ নেয়া হয়। এরপর গ্রেসিয়ারের উৎপাদকের সাহায্যে শিশিরাঙ্ক বের করে আপেক্ষিক আর্দ্রতা নির্ণয় করা হয়। মনে করা যাক, শুষ্ক ও সিক্ত বাল্ব থার্মোমিটারে নির্দেশিত তাপমাত্রা যথাক্রমে ও এবং ঐ সময়ের শিশিরাঙ্ক । তাহলে গ্লেসিয়ারের সূত্রানুসারে,
এ সমীকরণ থেকে শিশিরাঙ্ক নির্ণয় করা যায়, এখানে G হচ্ছে B°C তাপমাত্রায় গ্লেসিয়ারের উৎপাদক (সারণি ১০.২ দ্রষ্টব্য)। শিশিরাঙ্ক পাওয়া গেলে রেনোর তালিকা থেকে শিশিরাঙ্কে () সম্পৃক্ত জলীয়বাষ্পের চাপ, বায়ুর তাপমাত্রায় (f) সম্পৃক্ত জলীয়বাষ্পের চাপ F নির্ণয় করে আপেক্ষিক আর্দ্রতা নির্ণয় করা যায়।
সুতরাং,
১। সুবেদী থার্মোমিটার ব্যবহার করা হয়।
২। থার্মোমিটার দুটির পারদস্তম্ভ স্থির অবস্থানে এলে পাঠ নেয়া হয়।
৩। মসলিন বা লিনেনের সলতে যাতে থার্মোমিটারের বালবকে আবৃত রাখে সে দিকে লক্ষ রাখা হয়।
৪। সলতের নিচের প্রান্ত যাতে পাত্রের পানিতে ডুবে থাকে সে দিকে লক্ষ রাখা হয়।
আরও দেখুন...